ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা
মেসের ঘরে হিমু শুয়ে আছে। শহর জুড়ে লোডশেডিং। আকাশে থালার মতো চাঁদ ওঠায় শহর অন্ধকারে ডুবে যায়নি। জানালা দিয়ে হিমুর ঘর জোছনা ঢুকছে। জোছনার কোনো রং থাকে না। শুধু সিনেমার জোছনা হয় নীল। হিমুর কাছে আজ রাতের জোছনা সিনেমার জোছনার মতো নীল লাগছে। নীল জোছনা গায়ে মাখতে ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে নীল রঙ চামড়া ভেদ করে ভেরতে ঢুকে যাচ্ছে। জোছনারাতে বনে যাওয়ার নিয়ম। তার কাছে শহরটাকে মাঝে মাঝে গহীন অরণ্য মনে হয়। শহরের অলিতে গলিতে হাঁটা মানে গহীন বনের ভেতরের গায়ে চলা পথে হাঁটা।
ভূমিকা
প্রফেশনাল হ্যাজার্ড বলে একটা কথা ইংরেজিতে প্রচলিত আছে। বাংলায় হবে-পেশাগত বিপদ। যে দরজি ছাতা সেলাই করে তার বিপদ হলো, আঙুরে সুঁই ঢুকে যাওয়া। লেদ মেশিন যে চালায় তার বিপদ মেশিনে হাত কাটা পড়া। লেখকদের বিপদ অনেক মেশি। লেখালেখির জন্যে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা আছে। দেশান্তরি হওয়ার ঘটনা তো বাংলাদেশেই আছে।
হিমু নিয়ে যখন লেখি এক ধরনের শঙ্কা কাজ করে-না জানি কোন ঝামেলায় পড়ি! বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্টই সহনশীল। শুধু ক্ষমতাধর মানুষরা না। তারা আমজনতাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা উপভোগ করেন, তাদের নিয়ে রঙ্গ-রসিকতা সহ্য করেন না। ক্ষমতাবানরা নিজেদের সবকিছুর উর্ধ্বে ভাবেন।
আমি এই বইতে কিছু কঠিন রসিকতা করেছি। সরি, আমি না, হিমু করেছে। সমস্যা হলে হিমুর হবে। একটা ভরসা আছে, হিমু চাঁদের আলো ছাড়া কোনো কিছুই গায়ে মাখে না।
হুমায়ূন আহমেদ
নুহাশ পল্লী