.বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি হই তখন আমার ক্লাশমেটরা সব নতুন । প্রায় কাউকেই চিনতাম না । একাকীত্ব দূর করার জন্য বন্ধুত্ব করা আবশ্যক হয়ে পরলো । যাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য ভালো এবং পোশাকে চাকচিক্য তাদেরকে দেখে–দেখে পরিচিত হতাম,, বন্ধুত্ব করতাম ।
শুধু কি বাস্তব জীবনেই !! ফেসবুকেও সেইসব ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গুলো একসেপ্ট করতাম যাদের প্রোফাইল পিকচার আর সেলফি গুলো চাকচিক্যময় হতো । আসলে বাইরের এই সৌন্দর্যই কি আসল সৌন্দর্য ?? এটা বুঝেছি,, সেই বাহ্যিক চাকচিক্যময় বন্ধু গুলোর সাথে মেশার পর । এদের চেহারা গুলো সুন্দর হলেও
আচার-ব্যবহার ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ের খারাপ । ইসলামের ছিটে-ফোঁটাও ছিল না এদের মধ্যে ।
কথা গুলো এজন্যই বললাম যে,, একজন মানুষের বাহ্যিক অবস্থা যতই আকর্ষনীয় হোক না কেন,তার আত্না যদি পরিশুদ্ধ না হয় ; তার এ বাহ্যিক চাকচিক্যতার কোনো মূল্যই নেই । আমরা আমাদের চারপাশের লোকগুলোকে তাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে পরিমাপ করি । তা দেখে পছন্দ হলে কাছে টেনে নেই আর না হলে দূরে ঠেলে দেই,,এড়িয়ে চলি । অথচ প্রকৃত সুন্দর তো সেই ব্যক্তি, যার অন্তর পরিশুদ্ধ ।
–
কলুষিত অন্তর গুলোকে সুন্দর করতে আর আত্নার ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে “রুহামা পাবলিকেশন” –এর এক অনবদ্য প্রকাশনা হচ্ছে “ইবনুল জাওযি” রহ. এর “আত্মার পরিচর্যা” বইটা ।
–
বইটার নাম যখন প্রথম শুনি,, তখন থেকেই আরেকটা নাম মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো । সেটা হচ্ছে–“বাগান পরিচর্যা” । কারন “পরিচর্যা” শব্দটার সাথে আমি “বাগান” শব্দটা শুনেই অভ্যস্ত ।
“আত্মার” সাথেও যে “পরিচর্যা” শব্দটা যেতে পারে এটা কখনো ভাবিনি । বইয়ের বিষয়বস্তুর সাথে বইয়ের নামটা সত্যিই যথার্থ এবং প্রশংসনীয় । অবাক করা বিষয় হচ্ছে,, বইটা যখন পড়ছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো আমি নিজেই যেন একটা “বাগান” আর আমার মৃত প্রায় অন্তরটা যেন সেই বাগানটার চারাগাছ । বাগানে যখন পানি দেয়া হয় তখন গাছগুলো যেরকম সজীব আর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে তেমনি বইটা যখন পড়ছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো আমার মৃত অন্তরটাতেও কেউ যেন পানি ঢেলে দিচ্ছে । অন্তরের কলুষতা গুলো যেন মুছে
যাচ্ছে ।
–
আত্নশোধনের সঠিক পথ দেখানো, ক্ষতিকর বিষয়ের প্রবৃত্তি থেকে মনকে নিবারন করা এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত থাকা বিষয়গুলোর পরিশোধন করাই বইটির মূল বিষয়বস্তু । ৩০ টি ছোট-ছোট অধ্যায় নিয়ে
বইটিকে সাজানো হয়েছে । অধ্যায়গুলো ছোট-ছোট আর সাবলীল ভাষায় হওয়ায় আপনি ধৈর্য হারা হবেন না । অন্তরের ব্যাধির সাথে সম্পৃক্ত এমন কোনো বিষয় নেই যা বইটিতে তুলে ধরা হয় নি এবং তার সমাধানের পথ বাতলে দেয়া হয় নি !!
–
এখনে কয়েকটি অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি,, যেগুলো পড়ার সময় মনে হয়েছিলো– আমার ভুল গুলো যেন কেউ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ।
““““““““““““““““““““““““““““
.
▐——প্রেম রোগ থেকে মুক্তি—–▌
.
এই ব্যাধিটা আমাদের প্রায় প্রতিটা জেনারেল লাইনে পড়া স্টুডেন্টদের মধ্যে মহামারী রূপ ধারন করছে । কত মানুষের জীবন যে নষ্ট করেছে তার ইয়ত্তা নেই । খুব অল্প আলোচনার মধ্য দিয়ে লেখক এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ বাতলে দিয়েছেন ।
.
▐———হিংসা পরিহার——–▌
.
এই অধ্যায়টা শুরু করতে না করতেই দ্বিতীয় লাইনে এসে ধাক্কা খেয়েছি । কি ছিল দ্বিতীয় লাইনে ?? —[ “অন্যের চেয়ে একটু আলাদা হওয়ার চেষ্টা বা কাউকে নিজের সমকক্ষ হতে না দেওয়ার অসুস্থ মানসিকতা
থেকেই হিংসা জন্ম নেয়” ] । লাইনটা একবার না,, বেশ কয়েকবার পড়তে হয়েছে । কেননা এই লাইনটার একটা অংশ হুবহু আমার সাথে মিলে গেছে । হিংসাত্নক অন্তরটাকে শুদ্ধ করতে এই অধ্যায়টা একবার না,, বেশ
কয়েকবার পড়া উচিত । এই ব্যাধির লক্ষন এবং
প্রতিকার সম্পর্কে লেখক বিস্তারিত আলোচনা
করেছেন । মুক্তি পাওয়ার পথটাও দেখিয়ে দিয়েছেন ।
.
▐——-নেতৃত্ব প্রত্যাখ্যান—–▌
.
একজন শাসক বা নেতার অন্তরের বিশুদ্ধতা কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । নেতৃত্ব হচ্ছে একটা আমানত । সেটার খিয়ানত করলে কিয়ামত দিবসে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হবে সেটার কথাও উঠে এসেছে ।
.
▐———রাগ সংবরন——–▌
.
রাগ মানুষের এক স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য । তবে এতে বাড়াবাড়ি নিন্দনীয় । এর চূড়ান্ত পরিনতি ভয়ংকর । এই রোগ থেকে আরোগ্য পেতে লেখক হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন । সালাফদের দৃষ্টান্ত
টেনেছেন । দেখিয়েছেন রাগ সংবরনের ফযীলত সমূহ ।
.
▐———অহংকার পরিত্যাগ——–▌
.
অহংকার এমন এক অসুস্থতা যা না করতে পারা
লোকেরা প্রত্যেক মূহুর্তে হতাশ থাকে । আমরা কেউই এমনকি অধিক ইবাদাতকারীদের মধ্যেও কেউ কেউ এই অহংকার থেকে নিরাপদ না । আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা মসজিদে দাঁড়িয়েও অন্যদের চাইতে নিজেকে ‘স্পেশাল’ মনে করে । এই অহংকারের কারনেই ইবলিস অবাধ্য হয়েছিল আল্লাহর । হয়েছিল
বিতাড়িত আর অভিশপ্ত । আজ আমরা নিজের বিদ্যা, বুদ্ধি, পরিচিতি, সম্পদ, ক্ষমতার কারনে নিজেকে অন্যের চেয়ে ভালো মনে করি । গুরুত্বপূর্ণ মনে করি । সম্মানিত মনে করি । আমাদের বুকের ভেতরে টুকরো টুকরো ইবলিশকে বয়ে নিয়ে বেড়াই ।
লেখক দুটি পন্থায় এ রোগ নিরাময়ের কথা বলেছেনঃ—- ১)সংক্ষেপে || ২) বিস্তারিত ।
সংক্ষিপ্ত পন্থাটি আবার দুই প্রকারঃ—-
১) তাত্ত্বিক || ২) ব্যবহারিক ।
“যার অন্তরে অণু পরিমান অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না” — এ হাদিসটির একটা চমৎকার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ।
.
▐——–অহেতুক দুঃখ পরিহার——-▌
.
পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ করলে সেটা আমাকে যথেষ্ট পীড়া দেয় । সারাদিন-রাত শুধু আফসোস করতে থাকি । লেখক এ জাতীয় দুঃখ গুলোকে অহেতুক বলেছেন । কেননা সারা দিন-রাত আফসোস করতে থাকলে তো আর মার্ক সিট-টা পরিবর্তন হয়ে যাবে না !! বরং সামনে কিভাবে ভাল করা যায় সেদিকটাতে মনোযোগী হওয়া উচিত । অহেতুক এই দুঃখ গুলো অন্তরে শুধু অশান্তিরই সৃষ্টি করে । এতে ইবাদতেও বিঘ্ন ঘটে । এ ধরনের দুঃখ গুলোকে পরিহার করতে হলে কি কি পন্থা অবলম্বন করতে হবে লেখক সেগুলো দেখিয়েছেন । কি করলে অশান্ত মন স্থির হবে,,সেগুলো বলেছেন ।
পরবর্তী অধ্যায়টা হলো “দুশ্চিন্তা ও অযথা উদ্বেগ পরিহার” — সম্পর্কে । এটাতে লেখক দুঃখ,,দুশ্চিন্তা ও অযথা উদ্বেগ সম্পর্কে আরো চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন ।
.
▐——-নিজের দুর্বলতা চিহ্নিত করা—–▌
.
আমরা অন্যের দোষগুলো,, অন্যের দুর্বলতা গুলোকে যেমন নিখুঁত ভাবে ধরি নিজের বেলাতে তা ঠিক পুরো উল্টো । নিজের ভুল গুলো যেন চোখেই পড়ে না । এটা একটা মারাত্নক ব্যাধি । এ ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে লেখক নিজেকে নিজের শত্রুর ভূমিকায় অবতীর্ন করে
দুর্বলতা গুলোকে শনাক্ত করতে বলেছেন । তাছাড়া আরো ৭ টি উপায় উল্লেখ করেছেন । যেগুলোর মাধ্যমে আমরা নিজেরাই নিজেদের দুর্বলতা আর দোষ গুলোকে শনাক্ত করতে পারবো ।
===========================
এছাড়াও,, লেখক অন্যসব অধ্যায় গুলোতে দেখিয়েছেন আরো সমাধানের পথ ও প্রতিকার । কিভাবে নিজেকে অনুপম চরিত্রে চিত্রায়িত করা যায় সেসব নিয়ে লিখেছেন । লিখেছেন কোন্ ধরনের মানুষের সাথে মেলামেশা করা উচিত ,, কাদেরকে এড়িয়ে চলা উচিত সেসব নিয়ে । দাম্পত্য জীবন,, সন্তানের অনুশাসন,, আত্নশুদ্ধি,, আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা সহ গুরুত্বপূর্ন সব বিষয় নিয়ে লিখেছেন ।
–
বইয়ের লেখক “ইবনুল জাওযি” রহ. এর মূল নাম—
“আব্দুর রহমান” । তিনি ছিলেন একাধারে মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ঐতিহাসিক,বিতার্কিক এবং অসংখ্য গ্রন্থপ্রনেতা । ইলমের শাখায়-প্রশাখায় ছিল তাঁর অগাধ পান্ডিত্য । লেখকের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত পরিচিতি
বইয়ের শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে ।
–
আত্নশুদ্ধির জন্য এবং আত্নার ব্যাধি থেকে চিকিৎসা গ্রহনের এক উত্তম ব্যবস্থাপত্র এই বইটি । বইটিতে কোনো বানান ভুল চোখে পড়েনি । বইয়ের পৃষ্ঠা মান এবং সাজসজ্জা প্রশংসনীয় । বইয়ের কোনো বিষয় নিয়ে সমালোচনা করার মতো কিছু পাইনি । আর পেলেও সমালোচনা করার মতো কোনো যোগ্যতা কিংবা ইলম আমার নেই ।
আত্মার পরিচর্যা (পেপারব্যাক)
৳ 120 ৳ 80
Title | আত্মার পরিচর্যা |
Author | ইবনুল জাওযী রহ. |
Translator | হাসান মাসরুর |
Editor | মুফতি তারেকুজ্জামান |
Publisher | রুহামা পাবলিকেশন |
Edition | 1st Published, 2018 |
Number of Pages | 136 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
* প্রকাশনীতে স্টক থাকা সাপেক্ষে ডেলিভারী করা হবে। বই স্টক আউট হলে অগ্রীম পেমেন্টের ক্ষেত্রে রিফান্ড করা হবে।
Category: ইবাদত, আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
Publisher: রুহামা পাবলিকেশন
Weight | 135 kg |
---|---|
Edition | 1st Published, 2018 |
Number of Pages | 136 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
Related products
-33%
-50%
-38%
-50%
-50%
-50%
-30%
-33%
-33%
-50%
-32%
-25%
-30%